শীতকাল এলেই বাজারে মটরশুঁটির সরবরাহ বেড়ে যায়। পোলাও, খিচুড়ি, নুডলস, পাস্তা থেকে শুরু করে কচুরি পর্যন্ত—প্রায় সব খাবারে মটরশুঁটির ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু এই সুস্বাদু সবজিটি শুধু স্বাদের জন্যই জনপ্রিয় নয়, বরং এতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। চলুন, মটরশুঁটির কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
Table of Contents
১. প্রোটিনের চাহিদা পূরণে সক্ষম
মটরশুঁটিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, যা আমাদের শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদদের মতে, এক বাটি মটরশুঁটি খেলে তা প্রায় দুই টুকরো মাছ বা মাংসের সমপরিমাণ প্রোটিন সরবরাহ করতে পারে। যারা নিরামিষভোজী বা মাছ-মাংস কম খান, তাদের জন্য মটরশুঁটি একটি আদর্শ উৎস।
২. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী
খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) আমাদের শরীরে নানা অসুস্থতার কারণ হতে পারে। মটরশুঁটিতে থাকা ফাইবার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি ট্রাইগ্লিসারাইড উৎপাদন হ্রাস করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩. রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
মটরশুঁটির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম, অর্থাৎ এটি ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও, এতে থাকা ফাইবার এবং প্রোটিন টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
মটরশুঁটিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি, ই, এবং জিঙ্ক শরীরকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে সুরক্ষিত রাখে।
৫. হাড় ও পেশি মজবুত করে
মটরশুঁটিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়াও, এতে থাকা প্রোটিন এবং আয়রন পেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
৬. হজমশক্তি বাড়ায়
মটরশুঁটিতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। যারা প্রায়ই হজমের সমস্যায় ভুগছেন, তারা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মটরশুঁটি যোগ করতে পারেন।
৭. ওজন কমাতে সাহায্য করে
মটরশুঁটি কম ক্যালোরিযুক্ত একটি খাদ্য। এতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকায় এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে এবং ক্ষুধা কমায়। যারা ওজন কমানোর পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার।
৮. ত্বক এবং চুলের যত্নে মটরশুঁটি
মটরশুঁটিতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
৯. মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে
মটরশুঁটিতে থাকে ফোলেট এবং ভিটামিন বি৬, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে কার্যকর।
১০. সুগার নিয়ন্ত্রণ করে
মটরশুঁটির ফাইবার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ (ফাইবার) রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করে এবং গ্লুকোজের শোষণ ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়। এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। এছাড়া, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। নিয়মিত মটরশুঁটি খেলে রক্তে সুগারের স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, যা দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিসের জটিলতা এড়াতে সহায়ক।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
প্রশ্ন ১: প্রতিদিন মটরশুঁটি খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে পরিমাণে খেতে হবে। অতিরিক্ত খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন ২: ডায়াবেটিস রোগীরা কি মটরশুঁটি খেতে পারেন?
উত্তর: অবশ্যই। মটরশুঁটির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
প্রশ্ন ৩: মটরশুঁটির কোন পুষ্টি উপাদান সবচেয়ে বেশি?
উত্তর: মটরশুঁটিতে প্রোটিন, ফাইবার, এবং ভিটামিন সি সবচেয়ে বেশি থাকে।
প্রশ্ন ৪: মটরশুঁটি কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?
উত্তর: হ্যাঁ, কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবার থাকার কারণে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৫: মটরশুঁটি কতক্ষণ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায়?
উত্তর: ফ্রিজে রাখলে মটরশুঁটি প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে।
শেষ কথা
মটরশুঁটি শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু সবজি নয়, এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাদ্য। এটি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় যোগ করলে শরীর সুস্থ এবং ফিট থাকবে। তাই, আজ থেকেই আপনার পাতে মটরশুঁটি যোগ করুন এবং উপভোগ করুন এর অসাধারণ উপকারিতা।