আমলকি, যাকে ইংরেজিতে Indian Gooseberry বলা হয়, একটি চমৎকার ভেষজ ফল যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি শুধু আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে না, বরং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলকি বিশেষত ভিটামিন সি-এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎস হিসেবে পরিচিত। আসুন, আমলকির পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
Table of Contents
আমলকির পুষ্টি
আমলকির পুষ্টিগুণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকীতে রয়েছে—
- ভিটামিন সি: ৬০০ মি.গ্রাম (একটি বড় কমলার চেয়ে বেশি)
- ক্যালসিয়াম: ৫০ মি.গ্রাম
- ফসফরাস: ২০ মি.গ্রাম
- লৌহ: ১.২ মি.গ্রাম
- ক্যারোটিন (ভিটামিন এ): ৯ মাইক্রোগ্রাম
- থায়ামিন (ভিটামিন বি১): ০.০৩ মি.গ্রাম
- রিবোফ্লেভিন (ভিটামিন বি২): ০.০১ মি.গ্রাম
আমলকির এই পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, হাড় মজবুত করতে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণে কার্যকর।

আমলকির উপকারিতা
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আমলকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি ঠান্ডা, সর্দি-কাশি এবং সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।
২. স্কার্ভি প্রতিরোধে কার্যকর
ভিটামিন সি-এর ঘাটতিজনিত রোগ, যেমন স্কার্ভি, লিউকরিয়া বা অর্শ প্রতিরোধে আমলকি অত্যন্ত উপকারী।
৩. চুল ও ত্বকের যত্নে আমলকি
আমলকির রস বা বাটা চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল পড়া কমায় এবং চুল পাকা বন্ধ করে। এটি ত্বক উজ্জ্বল রাখতে এবং বলিরেখা দূর করতেও সাহায্য করে।
৪. হজম শক্তি বৃদ্ধি
আমলকি হজমশক্তি উন্নত করে। এটি পেট পরিষ্কার রাখে এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যায় উপকারী।
৫. হৃদরোগ প্রতিরোধ
হার্টের রোগীদের জন্য আমলকি অত্যন্ত উপকারী। এটি রক্তনালির কার্যকারিতা উন্নত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৬. রক্তস্বল্পতা দূর করে
আমলকির লৌহ শরীরে রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে। এটি রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার জন্য কার্যকর।
৭. চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে
নিয়মিত আমলকি খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে এবং চোখের ক্লান্তি কমে।
৮. ঠান্ডা ও কাশিতে উপশম দেয়
আমলকি শ্লেষ্মা দূর করতে সাহায্য করে। এটি ঠান্ডা, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট উপশমে কার্যকর।
৯. বমি বন্ধ করে
শুকনো আমলকি পানিতে ভিজিয়ে সেই পানিতে চন্দন ও চিনি মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়।
আমলকির ব্যবহারের বিভিন্ন উপায়
১. কাঁচা খাওয়া
কাঁচা আমলকি সরাসরি চিবিয়ে খাওয়া সবচেয়ে উপকারী।
২. রস করে পান করা
আমলকির রস নিয়মিত পান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৩. শুকনো আমলকি
শুকনো আমলকি ভিজিয়ে সেই পানি পান করলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং পেটের সমস্যার সমাধান হয়।
৪. চুলে ব্যবহার
আমলকির বাটা বা রস চুলে নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
প্রশ্নোত্তর সেকশন
প্রশ্ন ১: আমলকি কীভাবে খাওয়া উচিত?
উত্তর: আমলকি কাঁচা খাওয়া, রস করে পান করা, কিংবা শুকনো করে খাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন ২: আমলকি কি রোজ খাওয়া নিরাপদ?
উত্তর: হ্যাঁ, প্রতিদিন ১-২টি আমলকি খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী।
প্রশ্ন ৩: আমলকি কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?
উত্তর: হ্যাঁ, আমলকি বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৪: চুলের জন্য আমলকি কতটা কার্যকর?
উত্তর: আমলকি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পাকা ও চুল পড়া কমায়।
প্রশ্ন ৫: আমলকি কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো?
উত্তর: হ্যাঁ, আমলকি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
শেষ কথা
আমলকি প্রকৃতির একটি অসাধারণ উপহার। এটি শুধু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, বরং চুল, ত্বক এবং চোখের জন্যও চমৎকার। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় আমলকি যুক্ত করলে আপনি পেতে পারেন সুস্থ ও সুন্দর জীবন।