পেয়ারা, বাংলাদেশের একটি সহজলভ্য ও জনপ্রিয় ফল, যা সারা বছরই পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটি শুধুমাত্র সুস্বাদুই নয়, এটি আমাদের শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। চলুন জেনে নিই পেয়ারার পুষ্টিগুণ এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা।
Table of Contents
পেয়ারার পুষ্টিগুণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। নিচে পেয়ারার প্রধান পুষ্টিগুণের বিস্তারিত দেওয়া হলো:
ভিটামিন সি
পেয়ারা ভিটামিন সি-এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস। একটি মাঝারি আকারের পেয়ারায় প্রায় ২১১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, যা আমাদের দৈনিক প্রয়োজনীয়তার চেয়েও বেশি। ভিটামিন সি আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।
ফাইবার
পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় প্রায় ৫ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার পাওয়া যায়। এটি হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে কার্যকর।
অন্যান্য পুষ্টি উপাদান
- ভিটামিন এ: চোখের রেটিনা সুস্থ রাখতে এবং রাতকানা প্রতিরোধে সহায়ক।
- পটাশিয়াম: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- লাইকোপেন: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।
- ম্যাগনেসিয়াম: মানসিক চাপ কমাতে ও পেশির কার্যকারিতা উন্নত করতে কার্যকর।
পেয়ারার স্বাস্থ্য উপকারিতা

১. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
পেয়ারায় ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ঠান্ডা-সর্দি বা ক্ষত নিরাময়ে এটি অত্যন্ত উপকারী।
২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
পেয়ারার ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়া পেয়ারার পাতা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকর।
৩. ক্যানসার প্রতিরোধ
পেয়ারায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, লাইকোপেন, এবং ভিটামিন সি ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধে ভূমিকা রাখে। বিশেষত, প্রোস্টেট ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে এটি উপকারী।
৪. হার্টের সুস্থতায় সহায়ক
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পেয়ারা খাওয়া রক্তচাপ কমায় এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
৫. ওজন কমাতে সাহায্য
পেয়ারায় ক্যালোরির পরিমাণ কম এবং ফাইবার বেশি থাকায় এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সহায়ক। ফলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
৬. ত্বক ও চুলের যত্নে
পেয়ারার ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক।
কিভাবে পেয়ারা খাবেন
- কাঁচা খেতে পারেন অথবা সালাদ হিসেবে উপভোগ করতে পারেন।
- পেয়ারার জুস তৈরি করে পান করতে পারেন।
- পেয়ারার পাতা চা হিসেবে পান করলে এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
প্রশ্নোত্তর সেকশন
১. প্রতিদিন পেয়ারা খাওয়া কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, প্রতিদিন পেয়ারা খাওয়া নিরাপদ। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
২. ডায়াবেটিস রোগীরা পেয়ারা খেতে পারেন?
হ্যাঁ, ডায়াবেটিস রোগীরা পেয়ারা খেতে পারেন। তবে পেয়ারার পরিমাণ নির্ধারণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩. পেয়ারার পাতা কি খাওয়া যায়?
হ্যাঁ, পেয়ারার পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সহায়ক।
৪. পেয়ারা কি গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী?
গর্ভবতী নারীদের জন্য পেয়ারা খুবই উপকারী, কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন ও ফাইবার যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৫. পেয়ারা কি শিশুরা খেতে পারে?
হ্যাঁ, শিশুরা পেয়ারা খেতে পারে। তবে এটি নরম করে খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
শেষ কথা
পেয়ারা একটি প্রকৃতির আশীর্বাদ। এটি সস্তা, সহজলভ্য এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেয়ারা রাখলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই, আজ থেকেই পেয়ারা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।