ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। বর্ষাকালে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। এডিস মশা মূলত দিনের বেলায় কামড়ায় এবং ঘরের আশেপাশে জমে থাকা পানিতে প্রজনন করে। ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে সচেতনতা ও প্রতিরোধের জন্য এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Table of Contents
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
- উচ্চ জ্বর: তাপমাত্রা সাধারণত ১০১°-১০৪°F পর্যন্ত হতে পারে।
- শরীরে তীব্র ব্যথা: বিশেষ করে পেশী ও হাড়ে।
- মাথাব্যথা ও চেহারার পেছনে ব্যথা: এটি ডেঙ্গুর অন্যতম চিহ্ন।
- ত্বকে র্যাশ: ত্বকে লালচে দাগ দেখা যেতে পারে।
- বমি ও বমিভাব: কিছু ক্ষেত্রে খাবার গ্রহণে অনীহা দেখা দেয়।
- গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া: লিম্ফ নোডে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- রক্তক্ষরণ: গুরুতর ক্ষেত্রে নাক বা মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের সময় করণীয়
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: জ্বর হলে অবিলম্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।
- তরল খাবার গ্রহণ করুন: ডাবের পানি, স্যালাইন, ফলের রস এবং পানি বেশি করে পান করুন।
- প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন: জ্বর বা ব্যথার জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল গ্রহণ করুন।
- রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ নিন: রক্তে প্লাটিলেট কাউন্ট চেক করতে বলুন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
ব্যক্তিগত সুরক্ষা
- দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করুন।
- মশারোধী স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করুন।
- হালকা রঙের ফুলহাতা পোশাক পরুন।
পরিবেশগত ব্যবস্থা
- ঘরের আশেপাশে পানি জমতে দেবেন না।
- টব, ফুলদানি, ড্রেন ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
- জমে থাকা পানি পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখুন।
সচেতনতামূলক প্রচার
- পরিবার ও প্রতিবেশীদের ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন করুন।
- স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করে এলাকায় মশা নিধন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুন।
ডেঙ্গুর জটিলতা ও চিকিৎসা
ডেঙ্গুর তিনটি পর্যায় আছে:
- মৃদু ডেঙ্গু: সাধারণ লক্ষণ থাকে, হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না।
- ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF): রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে।
- ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (DSS): রক্তচাপ কমে যায় এবং জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যান:
- প্রচণ্ড পেটব্যথা
- ঘন ঘন বমি
- শ্বাসকষ্ট
- অচেতন অবস্থা
সচরাচর জিজ্ঞাসা ও উত্তর
১. ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ?
না, এটি এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে সরাসরি ছড়ায় না। এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়।
২. কোন ঔষধ ডেঙ্গুর জন্য ক্ষতিকর?
অ্যাসপিরিন ও আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এগুলো এড়িয়ে চলুন।
৩. ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কি ভ্যাকসিন আছে?
বর্তমানে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর কোনো অনুমোদিত ভ্যাকসিন নেই।
৪. প্লাটিলেট কমে গেলে কী করবেন?
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ বা চিকিৎসা গ্রহণ করবেন না।
৫. ডেঙ্গুর মশা মূলত কখন কামড়ায়?
সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে।
শেষ কথা
ডেঙ্গু একটি মারাত্মক রোগ, তবে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এটি এড়ানো সম্ভব। আপনার আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন এবং ডেঙ্গু সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করুন। জ্বর হলেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।