হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা ২০০১ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। এটি মূলত শীতকালীন ঋতুতে বেশি সক্রিয় হয় এবং শিশু, বয়স্ক, এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। এই ভাইরাস সাধারণ ঠাণ্ডা থেকে শুরু করে ব্রংকাইটিস ও নিউমোনিয়ার মতো গুরুতর শ্বাসযন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
Table of Contents
লক্ষণ
এইচএমপিভি সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
সাধারণ লক্ষণ:
- হালকা থেকে মাঝারি জ্বর
- সর্দি বা নাক বন্ধ
- কাশি
- গলা ব্যথা
গুরুতর লক্ষণ:
- শ্বাসকষ্ট
- বুক ভারী লাগা
- তীব্র কাশি
- ত্বকে র্যাশ বা লালচে দাগ
- খাবারে অরুচি (বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে)
সংক্রমণের লক্ষণ সাধারণত ৩-৬ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়।
কীভাবে ছড়ায় এইচএমপিভি?
এইচএমপিভি সাধারণত সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, বা নাকের শ্লেষ্মার মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়াও এটি স্পর্শের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, যেমন:
- আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে করমর্দন বা ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ
- দরজার হাতল, লিফটের বোতাম, চায়ের কাপ ইত্যাদি স্পর্শ করা
- হাত না ধুয়ে চোখ, নাক বা মুখে হাত দেওয়া
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
এইচএমপিভি যেকোনো বয়সী মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তবে, নিচের ব্যক্তিরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন:
- শিশুরা (বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সীরা)
- বয়স্ক মানুষ
- যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল (যেমন ক্যান্সার বা এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি)
- দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তি

এইচএমপিভি প্রতিরোধের উপায়
যদিও এইচএমপিভির কোনো নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন বা ওষুধ নেই, তবে কিছু সাধারণ পদক্ষেপ মেনে চললে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
সুরক্ষার উপায়:
- হাত ধোয়া:
- সাবান ও পানির সাহায্যে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে।
- হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন যদি সাবান ও পানি না থাকে।
- মুখ ঢেকে রাখা:
- কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় টিস্যু বা কনুই দিয়ে মুখ ঢাকুন।
- নিয়মিত পরিষ্কার করা:
- দরজার হাতল, মোবাইল ফোন, এবং অন্যান্য ব্যবহৃত জিনিসপত্র পরিষ্কার করুন।
- সমাজিক দূরত্ব বজায় রাখা:
- সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
- মাস্ক ব্যবহার:
- ভিড়পূর্ণ এলাকায় মাস্ক ব্যবহার করুন।
চিকিৎসা
এইচএমপিভি সংক্রমণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। তবে লক্ষণগুলো কমানোর জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে:
- শরীরকে আরাম দেওয়া:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
- প্রচুর পানি বা তরল পান করুন।
- জ্বর ও ব্যথার জন্য:
- প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করুন।
- কাশি ও শ্বাসকষ্টের জন্য:
- বাষ্প নেওয়া (Steam inhalation) শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- গুরুতর শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চিকিৎসকের কাছে কখন যাবেন?
এইচএমপিভি সংক্রমণ গুরুতর হলে বা নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- ঠোঁট বা ত্বক নীলচে হওয়া
- উচ্চ মাত্রার জ্বর
- শিশুদের ক্ষেত্রে খাবার বা পানীয় গ্রহণে অরুচি
পাঠকের প্রশ্নোত্তর
১. এইচএমপিভি কি কোভিড-১৯ এর মতো?
না, এইচএমপিভি এবং কোভিড-১৯ দুটি ভিন্ন ধরনের ভাইরাস। তবে উভয়ই শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে এবং সংক্রমণ ছড়ানোর উপায় প্রায় একই।
২. এইচএমপিভি কি প্রাণঘাতী?
প্রাণঘাতী নয়। তবে শিশু, বয়স্ক, এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে।
৩. এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে কতদিন সময় লাগে?
সংক্রমণের তীব্রতা এবং ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে সাধারণত ১-২ সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হওয়া সম্ভব।
৪. এইচএমপিভির কোনো টিকা আছে কি?
এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের জন্য কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি।
৫. এই ভাইরাস শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায় কেন?
শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয়।
শেষ কথা
এইচএমপিভি একটি সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা সতর্কতা এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, তবে সচেতন থাকুন এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। যদি গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।